
শাহরিয়ার শিমুল
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা সোনাইচন্ডী গ্রামের আতাউর রহমান। প্রতিবছর নিজ উদ্যোগে পেঁয়াজ বীজ চাষ করেছিলেন, স্বল্প জমিতে। তবে গতবছর লাভবান হওয়ায় এ বছরও পেঁয়াজ বীজ চাষে ঝুঁকেছেন, তবে আগের চেয়ে কিছুটা বৃহৎ পরিসরে। এবার ১ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষ করছেন তিনি। আর তাকে বৃহৎ পরিসরে পেঁয়াজ বীজ চাষে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি পুরো কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি।
শুধু আতাউর রহমানই নন, নাচোল উপজেলার আরো ৯ জনকে পেঁয়াজ বীজ চাষে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে প্রয়াস। বর্তমানে প্রয়াসের সহযোগিতায় পেঁয়াজ বীজ চাষে স্বপ্ন বুনছেন এই ১০ কৃষক। তবে পেঁয়াজ বীজ চাষের গল্পটা আতাউর রহমানকে নিয়ে।
উল্লেখ্য, এ বছর নাচোলে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হচ্ছে আড়াই হেক্টর জমিতে, যা গত বছর ছিল ১.৫ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার তিন ভাগের এক ভাগই চাষ হচ্ছে প্রয়াসের কারিগরি সহযোগিতায়।
কৃষক মো. আতাউর রহমান বলেন, আমাদের এলাকাতে নির্ভরযোগ্য বীজ পাওয়া খুব কঠিন। এজন্য এই উদ্যোগ নেয়া। প্রতিবছরই অল্প পরিসরে পেঁয়াজ বীজ চাষ করা হয়েছে। তবে গতবছর তুলনামূলক লাভ বেশি হয়েছে। তাই এবার বড় পরিসরে পেঁয়াজ চাষে উদ্বুদ্ধ করেছে প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি। তিনি বলেন, তাদের সহযোগিতায় এবার ১ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষ করছি। পেঁয়াজের কদম থেকে শুরু করে কীটনাশক, জৈব সারসহ সবকিছু দিয়েই তারা সহযোগিতা করছেন। কোনো সমস্যায় পড়লে দ্রুতই পরামর্শ দিয়ে সমাধান করছেন।
আতাউর রহমান আরো জানান, ১ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষ করতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৭০-৮০ হাজার টাকা। বাজারদর কম থাকলেও ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা এবং বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকলে ৫ লাখ টাকার উপরেও বিক্রি হতে পারে বলে আশা আতাউর রহমানের। তিনি বলেন, পেঁয়াজ বীজ চাষ করতে খুব একটা বেশি খরচ হয় না।
অন্যান্য চাষের চেয়ে পেঁয়াজ বীজ চাষটাকে লাভজনক মনে করছেন তিনি। প্রয়াসের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আতাউর রহমান বলেন, এভাবে পাশে থেকে সহযোগিতা করতে থাকলে আশপাশের আরো অনেক কৃষকই পেঁয়াজ বীজ চাষে আগ্রহী হবে।
এ বিষয়ে কথা হয় প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি গৌড় বাংলাকে বলেন, আমরা পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন এবং তা সম্প্রসারণ করার জন্য কৃষকদেরকে পরামর্শ দিয়ে থাকি। এছাড়া কারিগরি সহযোগিতার পাশাপাশি কিছু উপকরণও দিয়ে থাকি। তিনি বলেন, আমরা প্রথমত কৃষকদেরকে ভালো মানের বীজ সরবরাহ করে থাকি। এবার তাহেরপুরী জাতটি চাষ করার জন্য দেয়া হয়েছে। বীজ দেয়ার পাশাপাশি ভার্মি কম্পোস্ট, ট্রাইকো কম্পোস্ট ও জৈব সার দিয়ে থাকি। তিনি বলেন, রাসায়ানিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়।
প্রয়াসের এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, যে কোনো চাষ করার জন্য কারিগরি সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর সহায়তায় আমরা সেই কাজটিই করে যাচ্ছি। যেমন আমরা কৃষকদেরকে বলে থাকি একটি পেঁয়াজ থেকে আরেকটি পেঁয়াজের দূরত্ব কত হবে। তিনি বলেন, এই পদ্ধতিতে কোনো কৃষক কাজ করত না। আমাদের পরামর্শে তারা এভাবে চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছে।
নাচোল উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহম্মেদ বলেন, এ বছর নাচোলে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হচ্ছে আড়াই হেক্টর জমিতে, যা গত বছর ছিল ১.৫ হেক্টর। তিনি বলেন, নাচোলে এর আগে পেঁয়াজ বীজ চাষ হতো না। বর্তমানে কিছু জায়গায় এর বীজ উৎপাদনে কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছেন। এখন প্রতি বছরই এর উৎপাদন বাড়ছে। আগামীতে আরো বাড়বে বলে আশা তার। তিনি আরো বলেন, কৃষি বিভাগের পাশাপাশি প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটিও কৃষকদের কল্যাণে এগিয়ে আসছে। তিনি প্রয়াসের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রয়াস নিঃসন্দেহে ভালো কাজ করছে কৃষকদের জন্য। কৃষিকে এগিয়ে নিতে তারা কৃষকদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
কৃষিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য উন্নত পদ্ধতিতে যে কোনো ফসল উৎপাদন করলে তা থেকে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই কৃষিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় এগিয়ে যেতে হবে। তাহলে বাংলাদেশ আগামীতে প্রযুক্তিনির্ভর কৃষিতে অগ্রসর হবে বলে আশা প্রয়াস পরিবারের।