Welcome To Proyas Manobik Unnoyon Society

প্রয়াসেই চাকরিজীবন শেষ করতে চান অলোকা রানী

২০০২ সাল। সবে ডিগ্রি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। বসে না থেকে কাজ করার চিন্তা করছিলেন অলোকা রানী। তবে গতানুগতিক কোনো চাকরি নয়। সেই সময় মাঠকর্মীদের, বিশেষ করে নারীদের সাইকেল, মোটরসাইকেলে চড়ে চাকরি করতে দেখে এনজিওর প্রতি ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি হয় তার।
অলোকা রানী চেয়ার- টেবিলে বসে চাকরি করতে চাননি, চেয়েছিলেন মানুষের সাথে মিশতে; তাদের সুখ-দুঃখের ভাগীদার হতে। সেই চিন্তা থেকে একজনের মাধ্যমে জানতে পারেন প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সংস্থায় (সোসাইটির) নিয়োগের কথা। ২০০২ সালের ১ জুন মাঠকর্মী হিসেবে প্রয়াসে যোগ দেন তিনি। প্রয়াসের প্রথম ইউনিট অফিস গোবরাতলায় শুরু হয় কর্মজীবন।
চাকরিজীবনের প্রথম দিকে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন মনিরুজ্জামান, আমিরুল ইসলাম, হালিমা খাতুন, সিমন মারান্ডিকে। নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার হাজীনগর ইউনিয়নের হাসুড়া গ্রামের মেয়ে অলোকা রানী চাকরিজীবনের প্রথম মাসে বেতন পেয়েছিলেন ৪০০ টাকা। পরের ৬-৭ মাস পেয়েছিলেন ৫০০ টাকা করে। সেই সময় এই অল্প টাকায় জীবনযাপন অতিবাহিত করা কষ্টকর হলেও হাসিমুখেই সে কষ্ট মেনে নিয়েছিলেন প্রয়াসের প্রতি ভালো লাগা, আন্তরিকতা, টিমওয়ার্ক সর্বোপরি এর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক হাসিব হোসেনের কারণে।
অলোকা রানীর মতে, প্রয়াসে যে যেই পদে থাকুক না কেন, প্রত্যেকেই প্রত্যেকের কাছে খুব সহজে পৌঁছাতে পারে, যোগাযোগ করতে পারে উপর থেকে নিচ- সর্বত্রই। এটাই প্রয়াসের প্রতি অলোকা রানীর বিমোহিত হওয়ার মূল উপজীব্য।
ব্যবসায়ী বাবার সংসারে তিন বোন, দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনিই ছিলেন বড় সন্তান। প্রয়াসে চাকরিকালীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। কিন্তু প্রয়াসের কাজের প্রতি পুরো মাত্রায় আকৃষ্ট হওয়ায় মৌখিক পরীক্ষার জন্য কোনোরূপ চেষ্টা করেননি। পল্লী বিদ্যুতেও চাকরির সুযোগ হয়েছিল। বাড়ির সদস্যরাও চেয়েছিলেন, পল্লী বিদ্যুতে যোগ দিক অলোকা রানী। কিন্তু সেখানেও যোগ দেননি তিনি।
কর্মজীবনের শুরুর দিকে অনেক বিড়ম্বনা সইতে হয়েছে তাকে, কটূ কথাও শুনতে হয়েছে নারী হয়ে সাইকেল চালানোর দরুন। সেসব মনে পড়লে এখন হেসেই উঠেন অলোকা রানী। হাসি আসে এই ভেবে যে, আজকে তারই সংস্থা অর্থাৎ প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাইকেল বিতরণ করছে। আর সেই সাইকেলে চড়ে নারী শিক্ষার্থীরা স্কুলেও যাচ্ছে।
কর্মসূত্রে প্রয়াসের বিভিন্ন ইউনিট অফিসে তাকে কাজ করতে হয়েছে। তবে সব জায়গায় তিনি তার মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। তৃণমূল থেকে শুরু করে সবার সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে উঠেছে কাজ করার সুবাদে। মাঠকর্মী থেকে ইউনিট ব্যবস্থাপক হিসেবে পদোন্নতিও পেয়েছেন। আর বর্তমানে প্রয়াসের অডিট সেলে ডেপুটি ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বেতনও পান শুরুর বেতন থেকে ৯০ গুণ বেশি।
২০১১ সালে ব্যবস্থাপক থাকাকালীন বিয়ে-থা করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুত্রবধূ হয়ে উঠেন অলোকা রানী। শ্বশুরবাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার বটতলায়। স্বামী চাকরি করেন ঢাকায়। তাদের ঘরে এক মেয়ে রয়েছেন, পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে।
প্রয়াসের দক্ষ মেধাবী এই কর্মীর ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর এক দুর্ঘটনায় পা ভেঙে যায়। বাড়িতেই থাকতে হয় ৯ মাস। ওই ৯ মাসে প্রয়াসের আন্তরিকতায় কোনো ঘাটতি দেখেননি তিনি। নির্বাহী পরিচালক হাসিব হোসেনও তাকে সশরীরে দেখতে যান, যা তাকে আলোড়িত করে। সেই জায়গা থেকে আবারো ফিরে আসেন প্রয়াসে।
কয়েকজন মাঠকর্মী নিয়ে পথচলা প্রয়াস বড় প্রতিষ্ঠান হবে, তা কখনো ভাবেননি অলোকা রানী। ভেবেছিলেন, নিজের কাজটাই শতভাগ করে যেতে হবে। আজ প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি অনেক বড় প্রতিষ্ঠান চাঁপাইনবাবগঞ্জে। জেলার গ-ি ছড়িয়ে দেশের অন্য জেলাতেও কাজ করছে প্রয়াস। জনবলও বেড়েছে। সাত শতাধিক কর্মীর মধ্যে পুরোনো কর্মী হিসেবে অলোকা রানী এখন স্বপ্ন দেখেনÑ প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটিতে থেকেই চাকরিজীবন শেষ করার।

Scroll to Top