Proyas Manobik Unnayan Society

প্রয়াসের রেইজ প্রজেক্টের অবহিতকরণ সভা

শহর ও উপশহরকেন্দ্রিক এলাকায় নিম্নআয়ের যুবক এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর লক্ষে কাজ করছে প্রয়াসের রেইজ প্রজেক্ট। রিকভারি অ্যান্ড অ্যাডভান্সড অফ ইনফরমাল সেক্টর ইমপ্লয়মেন্ট (রেইজ) নামের এ প্রজেক্টের অবহিতকরণ সভা বুধবার সকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বেলেপুকুরস্থ প্রয়াসের নকীব হোসেন মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানথ্রোপলোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী রবিউল আলম, পিকেএসএফ’র রেইজ প্রকল্পের সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট দেওয়ান জিন্নাহ্, প্রয়াসের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক হাসিব হোসেন, প্রকল্পের ফোকালপার্সন ও প্রয়াসের পরিচালক মুখলেছুর রহমান, রেইজ প্রজেক্টের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর আলম বিশ্বাস, লাইফ স্কিল অ্যান্ড এন্টারপ্রিনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট অফিসার মোহাম্মদ মারুফ হোসেন, অ্যাকাউন্টস অফিসার আবু সালেকসহ প্রয়াসের ১৫টি ইউনিটের ইউনিট ব্যবস্থাপকগণ।বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)’র সহযোগিতায় প্রজেক্টটি বাস্তবায়ন করছে প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি।চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও নাটোর জেলায় অবস্থিত প্রয়াসের ১৫টি ইউনিটের মাধ্যমে রেইজ প্রজেক্টের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

আপনারাই প্রয়াসের চালিকা শক্তি : প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে কর্মীদের প্রতি হাসিব হোসেন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপিত হয়েছে। সোমবার বিকেলে জেলাশহরের বেলেপুকুরে সংস্থাটির নকীব হোসেন মিলনাতয়নে এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।অনুষ্ঠানে প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও ভার্চুয়ালি শাখা ইউনিট ও জোন কার্যালয়ের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা যুক্ত হন।প্রথমে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন এবং প্রয়াসের কার্যক্রম সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।বক্তব্যের শুরুতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের সদস্যগণ, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও সম্ভ্রমহারা ২ লাখ মা-বোন, যাঁদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বিজয় তাঁদেরকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক হাসিব হোসেন। তিনি প্রয়াসের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট আনোয়ারুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ প্রশান্ত কুমার সাহা, প্রয়াসের সাধারণ পরিষদের সদস্য মরহুম আনসার হোসেন, নির্বাহী পরিষদের সদস্য নকীব হোসেনসহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত এবং প্রয়াসের প্রয়াত সদস্যদেরও গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন।হাসিব হোসেন বলেন- রাষ্ট্রীয়ভাবে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে উন্নীত করার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা বাস্তবায়নে আমরা সবাই কাজ করে যাচ্ছি। প্রয়াসের অগ্রগতি তুলে ধরতে গিয়ে হাসিব হোসেন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শ্রম এবং কর্মস্পৃহার কথা তুলে ধরে বলেন- আপনাদের ঘাম আর সফলভাবে কাজ করার জন্যই প্রয়াস আজ এতদূর এগোতে পেরেছে। আমি আপনাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। এ প্রসঙ্গে তিনি প্রয়াসের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরামর্শ দিয়ে বলেনÑ আপনাদের অনেকের মধ্যেই কাজ করার আগ্রহ আছে, তবে হয়তো কোনো কারণে স্পৃহা পাচ্ছেন না। আমি বলব, যারা দক্ষ তারা তাকে উৎসাহ দিয়ে কাজ করবেন। তাদের মধ্যে কাজকে জয় করার উদ্দীপনা দেখতে পেয়েছি। সদস্যদের সঙ্গে ভালো আচরণ করে তাদেরকে সঞ্চয়ী হতে উদ্বুদ্ধ করবেন। তাদের ছোট ছোট সঞ্চয় তাদেরকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলবে। প্রতিষ্ঠানও লাভবান হবে।হাসিব হোসেন বলেন- আমি হয়ত কখনো আপনাদের বকাঝকা করেছি। সেটা করেছি আপনাদের কাজের জন্য এবং সংস্থার উন্নয়নের জন্য। আপনারা তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবেন। তিনি বলেন- প্রায় সাড়ে ৮০০ সহকর্মী একসঙ্গে একটি বড় টিম হয়ে কাজ করে সংস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। হাসিব হোসেন বলেন- আপনাদের অনেক দাবি আছে, আমরা পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে তা পূরণ করতে পারছি না। তবে আমি আশাবাদী, আমরা পারিপার্শ্বিক সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠে আপনাদের চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারব। আপনাদের ১০ শতাংশের যে বিষয়টি ছিল আমরা তা জানুয়ারি থেকে চালু করব। আপনাদের কাছ থেকেও কমিটমেন্ট লাগবে। সদস্যদের মন জয় করে ঋণের টাকা ফেরতের চেষ্টা করবেন। ঋণ ফেরত পেলে আবার তাকেই দেয়া হবে। তিনি বলেন- আমরা আইনগতভাবে দেশের ৬৪ জেলায় কাজ করার যোগ্যতা রাখি। ইতোপূর্বে আমরা দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি জেলায় কাজ করেছি। এখনো বেশ কয়েকটি জেলায় কাজ করছি। আমাদের ঢাকাতেও অফিস আছে।হাসিব হোসেন বলেন- আমরা ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দাতা সংস্থার মাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছি। তিনি বলেন- আমাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রেডিও মহানন্দা, প্রয়াস ফোক থিয়েটার ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন প্রকল্প আছে। প্রয়াস হেলথ কেয়ার থেকে উন্নতি লাভ করে এখন হয়েছে প্রয়াস হসপিটাল। আগামী ১ জানুয়ারি এর উদ্বোধন হবে। আপনারা সবাই এখানে চিকিৎসা সেবা পাবেন। আপনারা সহযোগিতা করবেন। তিনি বলেন- আপনারাই প্রয়াসের মূল চালিকা শক্তি, আপনাদের সবার সহযোগিতামূলক মনোভাব, কর্মদক্ষতা, নিষ্ঠা আর কাজের মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যতে আরো বহুদূর এগিয়ে যেতে পারব।অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রেডিও মহানন্দার স্টেশন ম্যানেজার আলেয়া ফেরদৌস। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- প্রয়াসের পরিচালক মুখলেছুর রহমান, জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক নাসের উদ্দিন, সহকারী পরিচালক মমিনুল ইসলাম, সমন্বিত কৃষি ইউনিটের ফোকাল পার্সন ফারুক আহমেদ, দাসত্ব ও মানব পাচারের বিরুদ্ধে লড়াই প্রকল্পের ব্যবস্থাপক দুরুল ইসলাম, এসইপি প্রকল্প ব্যবস্থাপক কৃষিবিদ জহুরুল ইসলাম, মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের ব্যবস্থাপক ইশরাত জাহান, গৌড় বাংলার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আজিজুর রহমান শিশির ও বার্তা সম্পাদক সাজিদ তৌহিদ।ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন- নওগাঁ জোন প্রধান আবুল কালাম আজাদ, আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক রাশেদুল ইসলাম, ইউনিট ব্যবস্থাপক মোজাম্মেল হক, উপব্যবস্থাপক অলোকা রানী, সিনিয়র অফিসার কারিমা খাতুন।এসময় সহকারী পরিচালক (নিরীক্ষা) আবুল খায়ের খান, কর্মসূচি ব্যবস্থাপক তানভীর আহমেদ, ফিরোজ আলম, ব্যবস্থাপক (হিসাব) সফিকুল ইসলামসহ প্রয়াসের প্রকল্প ব্যবস্থাপক, সমন্বিত কৃষি ইউনিটসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।আলোচনা শেষে বিভিন্ন প্রকল্পের পক্ষ থেকে প্রয়াসের নির্বাহী পরিচালক হাসিব হোসেনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয় এবং কেক কাটা হয়।

প্রয়াসের প্রথম ইউনিট অফিস গোবরাতলা

শাহরিয়ার শিমুল চাঁপাইনবাবগঞ্জের উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলা প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি দেখতে দেখতেই সফলতার ২৯ বছর পার করে ফেলল। অথচ বর্তমান প্রধান কার্যালয়ের নিচতলায় বারান্দা লাগোয়া একটি ছোট ঘরেই শুরু হয়েছিল এর পথচলা। এখন পরিসরও বেড়েছে। ইউনিট অফিসও হয়েছে অনেক। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গ-ি ছাড়িয়ে দেশের অন্য জেলাগুলোতেও প্রান্তিক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার জনগোষ্ঠীর ইস্যুভিত্তিক উন্নয়নে নিরলস কাজ করে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি।১৯৯৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর পথচলা শুরু করা প্রয়াস প্রায় ৩ বছর ওই ছোট ঘরেই বসে কার্যক্রম চালিয়ে গেছে। শুরুর কয়েকটা বছর জনবল ছাড়াই একাই প্রয়াসকে টেনে নিয়ে গিয়েছেন এর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক হাসিব হোসেন।এরপর ধীরে ধীরে পরিসর বড় হয় প্রয়াসের। কর্মপরিসর বাড়াতে প্রয়োজন হয় ইউনিট/শাখা অফিস খোলার। আজ চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ সারা দেশের রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, জয়পুরহাট, বগুড়া ও গাইবান্ধা জেলায় প্রয়াসের ৭১টি ইউনিট অফিস সেসব এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছে।১৯৯৭ সালের ৩ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নে কাজ করার লক্ষে প্রথম ইউনিট অফিস খোলা হয়। ইউনিট অফিসটির অবস্থান গোবরাতলা ইউনিয়নের চাঁপাই গ্রামে (বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেঁষা)। প্রথম দিকে টিনের ছাপড়া ঘরে শুরু হয়েছিল ইউনিট অফিসটির কার্যক্রম। আজ সেখানে প্রায় সাড়ে চার বিঘা জায়গার ওপর কার্যক্রম পরিচালনা করছে ইউনিট অফিসটি। প্রয়াসের বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হয় এই ইউনিট অফিসের মাধ্যমেই। আর এই ইউনিটটির প্রতি ভালো লাগা অনুভূতি সবসময় বিরাজমান নির্বাহী পরিচালক হাসিব হোসেনের মনে, যা তার কথাবার্তাতেও ফুটে উঠে।জনবলের জন্য প্রথম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় ১৯৯৬ সালে। গোবরাতলা ইউনিট অফিসের জন্য প্রথম নিয়োগ পেয়েছিলেন মুনিরা খাতুন ও শিমন মারান্ডী। পরে আরো কয়েকজনকে নিয়োগ দেয়া হয়। এদের মধ্যে শ্যামল সরেন, হালিমা খাতুন, অলোকা রানী উল্লেখযোগ্য। প্রথম নিয়োগ পাওয়া মুনিরা খাতুন বর্তমানে প্রয়াসের নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং অলোকা রানী ডেপুটি ম্যানেজার (নিরীক্ষা) পদে কর্মরত রয়েছেন।গোবরাতলা ইউনিট অফিস সামাজিক কার্যক্রম দিয়েই শুরু হয়। সামাজিক কার্যক্রমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলÑ বয়স্ক শিক্ষার নাইট স্কুল, স্যানিটেশন, এনএফপিই স্কুল (নন-ফরমাল প্রাইমারি এডুকেশন) পরিচালনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ, বিশুদ্ধ খাবার পানি, আর্সেনিক পানি ও আয়োডিনযুক্ত লবণ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি।গোবরাতলা ইউনিট অফিস অল্প পুঁজি দিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছিল। এই ইউনিট অফিসের প্রথম সদস্য হয়েছিলেন জমিলা বেগম, এখনো সদস্য আছেন। বর্তমানে এই ইউনিটের সদস্য প্রায় ২ হাজার।তবে প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির বিশাল কর্মযজ্ঞ সাধিত হয় এই প্রথম ইউনিট অফিসের মাধ্যমেই। এই গোবরাতলা ইউনিট অফিসেই রয়েছে প্রয়াসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রেডিও মহানন্দা ৯৮.৮ এফএমের ট্রান্সমিশন স্টেশন। এছাড়া এখান থেকেই প্রতিদিন সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হচ্ছে।ইউনিট অফিস লাগোয়া জমিতেই গড়ে উঠেছে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের জন্য ড্রাই ম্যাংগো কারখানা। এখানেই রয়েছে প্রয়াস নার্সারি, কুচিয়ার ব্রিডিং ডিচ, ভার্মি কম্পোস্ট কারখানা। আরো রয়েছে প্রয়াস ফোক থিয়েটার ইনস্টিটিউট (পিএফটিআই) এর স্টুডিও থিয়েটার। এই ইউনিটের আওতায় আমারকে গড়ে উঠেছে পুকুরে মুক্তা চাষ, ভেড়ার ব্রিডিং ও টার্কির প্যারেন্টস্টক খামার, পাতিহাঁস ও রাজহাঁসের খামার, যেখানে রয়েছে বিভিন্ন জাতের ভেড়া যেমন গাড়ল, অস্ট্রেলিয়ান হোয়াইটসিফ, ব্ল্যাক হেড ডরপার এবং পার্সিয়ান হার্লিকুইন্স ও আওয়াসি দুম্বা। এই আমারকেই ১৫ বিঘা জমিতে রয়েছে ড্রাগন-থাই, কাটিমন আম ও মাল্টা-গৌড়মতি আমের মিশ্র ফলের বাগান।ইউনিটটির মাধ্যমে হাজার হাজার পরিবারকে এসএমই ও ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানের পাশাপাশি সামাজিক ইস্যুভিত্তিক কার্যক্রম, যেমনÑ পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ, নারীর ক্ষমতায়ন, ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন, মানবপাচার প্রতিরোধ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং বিভিন্ন অধিকারভিত্তিক কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়। এছাড়া কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য এর বিভিন্ন আধুনিক নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এখানে ব্যাপক কর্মসূচি পরিচালনা করছে প্রয়াস।

প্রয়াসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান

প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির তিনটি সহযোগী সংগঠন রয়েছে। সংগঠন তিনটি হলো- কমিউনিটি রেডিও ‘রেডিও মহানন্দা ৯৮.৮ এফএম’, ‘প্রয়াস ফোক থিয়েটার ইনস্টিটিউট’ ও ‘প্রয়াস হেলথ কেয়ার’। প্রয়াসের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠন তিনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে ভূমিকা রেখে চলেছে। বিশেষ করে রেডিও মহানন্দা জেলার সামাজিক উন্নয়নে সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং এর প্রচার ও প্রসারে সক্রিয় থেকে সাধারণ মানুষের আকুণ্ঠ ভালোবাসা ও প্রশংসা কুড়িয়েছে। জেলার কৃষ্টি-কালচার তুলে ধরার চেষ্টা করছে প্রয়াস ফোক থিয়েটার ইনস্টিটিউট। এ অঞ্চলের হারিয়ে যাওয়া লোকসংস্কৃতিসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে গবেষণা ও চর্চাও চালিয়ে যাচ্ছে ইনস্টিটিউটটি। কমিউনিটি রেডিও-রেডিও মহানন্দা ৯৮.৮ এফএমপ্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত স্থানীয় সম্প্রচার ব্যবস্থা রেডিও মহানন্দা, যা চাঁপাইনবাবগঞ্জের গণমানুষের কল্যাণে সর্বদা নিবেদিত এবং সদা জাগ্রত। কমিউনিটিভিত্তিক সক্রিয় একটি গণমাধ্যম। রেডিও মহানন্দা ৯৮.৮ এফএম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক রেডিও স্থাপনের প্রাথমিক অনুমোদন প্রাপ্ত হয় ২০১০ সালের ২২ এপ্রিল।চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পাঁচটি উপজেলা- চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগঞ্জ, নাচোল, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট; রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী ও তানোর এবং নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার কিছু অংশবিশেষসহ ৮টি উপজেলা ৪২টি ইউনিয়ন যা আকাশ পথে ১৭ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ এলাকার ৯৮.৮ এফএম ব্যান্ডে বিকাল ৩টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত শোনা যায়। এছাড়াও অনলাইনে ২৪ ঘণ্টা দেশ-বিদেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে রেডিও মহানন্দা শোনা যায়।রেডিও মহানন্দা মূলত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও তৎসংলগ্ন জনগোষ্ঠীকে সহজে তথ্যে প্রবেশাধিকার দিয়ে, শহর ও গ্রামের মধ্যে তৈরি হওয়া তথ্য এবং জ্ঞান বিভাজন দূর করে, গণমাধ্যমে স্থানীয় মানুষের সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করার মধ্য দিয়ে তথ্য বিনিময়, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, শিক্ষা ও উন্নয়নে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় অবাধ ও বন্তুনিষ্ঠ তথ্যপ্রবাহের ক্ষেত্রে সেতুবন্ধন হয়ে কাজ করে। প্রয়াস ফোক থিয়েটার ইনস্টিটিউটচাঁপাইনবাবগঞ্জের ইতিহাসখচিত গ্রাম চাঁপাই, এই ঐতিহাসিক গ্রামের পাশেই অবস্থিত গোকুল। ছিল রাজবাড়ি। অবশ্য ভুল হলো, এখন রাজাও নেই, রাজবাড়িও নেই। তবে গ্রামটি এখনো মাথা উঁচু করে ইতিহাসের ঐতিহ্য বহন করছে। আর এই ইতিহাসের রূপ দিয়েছেন চাঁপাই গ্রামে বসবাসরত চম্পাবতী। যার নামটি আমাদের কাছে দিন দিন অপরিচিত হয়ে যাচ্ছে। নতুনদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইতিহাস। কারো কারো ভাবনায় ইতিহাসটি থাকলেও তা বক্তব্য বা লেখালেখির মধ্যে সীমাবদ্ধ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাঁপাই গোকুল ও চম্পাবতীকে নিয়ে অনেক গভীরে ভেবে প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক হাসিব হোসেন চাঁপাই গ্রামে জন্ম দিয়েছেন প্রয়াস ফোক থিয়েটার ইনস্টিটিউটের।চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইতিহাস, ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করছে প্রয়াস ফোক থিয়েটার ইনস্টিটিউট। নীরবেই চালিয়ে যাচ্ছে যুদ্ধ। প্রয়াস ফোক থিয়েটার ইনস্টিটিউট সুস্থ সমাজ গঠনে বিকল্প ধারার সাংস্কৃতিক সংগঠন। আজ থেকে ১৩ বছর আগে ২০০৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির সহযোগী সংগঠন হিসেবে এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। প্রয়াস হাসপাতালমানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে চিকিৎসা একটি গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা। বাংলাদেশের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বল্পমূল্যে সুচিকিৎসা প্রদানের জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র শান্তি মোড়ে ‘প্রয়াস হেলথ কেয়ার’। যার পথচলা শুরু হয় ২০১৭ সালের ২৭ আগস্ট।মাঠপর্যায়ে অতিদরিদ্র মানুষের পাশে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য সদর উপজেলাসহ নাচোল উপজেলায় অবস্থিত প্রয়াসের বিভিন্ন ইউনিটের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা চালু করা হয়। প্রতিটি ইউনিটে একজন করে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও ৮ থেকে ১০ জন করে স্বাস্থ্য পরিদর্শক নিয়োগ দেয়া হয়। স্বাস্থ্য পরিদর্শকগণ প্রতিদিন ৩০-৩৫টি পরিবারের সাথে স্বশরীরে যোগাযোগ করেন এবং খোঁজখবর নিয়ে তাদের ওজন, রক্তচাপ, শরীরের তাপমাত্রা মাপেন এবং অন্যান্য প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ দেন। প্রয়োজনবোধ করলে ইউনিটে অবস্থিত স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে মোবাইলের মাধ্যমে অবহিত এবং তার উপস্থিতি কামনা করেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অবহিত হলে অতি অল্পসময়ে উপস্থিত হয়ে সাধ্যমত সেবা প্রদান করেন। এছাড়াও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রতিটি সমিতিতে গিয়ে সদস্যদের খোঁজখবর নিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। পাশাপাশি প্রতিটি ইউনিটে গরিব ও অতিদরিদ্র সদস্যদের স্বাস্থ্যসেবা সহজতর করার জন্য প্রতি মাসে চক্ষু, দন্ত, মেডিসিন ও গাইনি রোগীদের জন্য চারজন করে বিভাগভিত্তিক এমবিবিএস চিকিৎসক দ্বারা বিনামূল্যে স্যাটেলাইট সেবা প্রদান করা হয়। প্রতিটি স্যাটেলাইটে প্রায় ৪০-৫০ জন করে রোগীদের সেবা দেয়া হয়। প্রতি ৬ মাস পর পিকেএসএফের অর্থায়নে রানীহাটি, গোলাপেরহাট, নেজামপুর ও হাটবাকইলে সমৃদ্ধি কর্মসূচির আওতায় বিভাগভিত্তিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা স্বাস্থ্য ক্যাম্পের মাধ্যমে প্রায় ১০০-১৩০ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। এছাড়া স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকগণ জরুরি ও জটিল রোগীকে উন্নত চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রয়াস হেলথ কেয়ারে পাঠান কিংবা নিয়ে আসেন।প্রয়াস হেলথ কেয়ার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি অত্যাধুনিক ডায়াগনস্টিক ও কনসালটেশন প্রতিষ্ঠান। এখানে সুদক্ষ জনবল দ্বারা স্বয়ংক্রিয় মেশিনের মাধ্যমে সব ধরনের রক্ত ও প্রেসার পরীক্ষা, এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, দন্ত ও ইসিজি করা হয়। প্রতিদিন সকালে ডায়াবেটিক ও মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক দ্বারা এখানে অতি অল্প খরচে সুচিকিৎসকার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও প্রতি শুক্রবার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা গাইনি, মেডিসিন, হৃদরোগ, ডায়াবেটিক, শিশু, অর্থপেডিকস রোগীদের সুচিকিৎসা দেয়ার সুব্যবস্থা রয়েছে। ধামাসাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্টের আওতায় প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির ই-কমার্স সাইট dhama.com.bd এর শুভ উদ্বোধন হয় ২০২১ সালের ৩০ জুন। উদ্বোধক ছিলেন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের।প্রয়াস বাংলাদেশের আমের রাজধানী হিসেবে খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মুখ্য ফসল নিরাপদ আম উৎপাদন ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের লক্ষে Safe Mango Promotion Through Learning (SAMPLE) প্রকল্প গ্রহণ করে; যা প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির একটি অনন্য প্রকল্প। বিশ্বায়নের এই সময় ক্রেতা-বিক্রেতাদের মেলবন্ধন করতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে অনলাইন মার্কেট। আর এই কাজটিও সম্পূর্ণ হচ্ছে প্রয়াসের অনলাইন মার্কেটপ্লেস dhama.com.bd এর মাধ্যমে; যেখানে দেশের সর্বত্র থেকে আমের অর্ডার নিয়ে ভোক্তাদের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছে। ঢাকার কিছু বিশেষ বিশেষ এলাকায় শর্তসাপেক্ষে হোম ডেলিভারির ব্যবস্থাও রয়েছে।dhama.com.bd এর ওয়েবসাইটে এসইপি প্রকল্পের আওতাধীন আমচাষিদের বাগানের বর্ণনা দিয়ে যোগাযোগের ব্যবস্থাও রয়েছে। তাই ক্রেতারা নিজেদের পছন্দের বাগানের আম খেতে পারবে এবং যেগুলো সম্পূর্ণ নিরাপদভাবে উৎপাদিত। তাই এমইদের অনলাইন মার্কেটিংয়ের একটা সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে এই প্রকল্প। এটি চলমান থাকলে আমচাষিরা উপকৃত হবেন। এছাড়া ধামায় রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার খ্যাতনামা খাদ্যদ্রব্যসহ বাহারি পণ্যের সমাহার। যেমন- কালাইয়ের আটা, চালের আটা, ছাতু, কুমড়ো বড়ি, আমসত্ত্ব, আমচুর, আচার, কালাই ডাল, প্রয়াস মধু, নকশীকাথাঁ, কাঁসা-পিতলের তৈজসপত্র। প্রয়াসের নিজস্ব খামারে লালন-পালনকৃত গরু, ছাগল, গাড়ল, ভেড়া অনলাইনে অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্তে পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া প্রয়াস নার্সারির বিভিন্ন জাতের গাছের চারা ও ভার্মি কম্পোস্ট সারও পাঠানো হয়। প্রয়াস এগ্রোপ্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি’র আরেকটি অন্যতম উদ্যোগ ‘প্রয়াস এগ্রো’। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলায় প্রয়াস এগ্রো কাজ করছে।।বাংলাদেশ হচ্ছে কৃষিনির্ভর দেশ। কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ সেক্টরসহ অন্যান্য কৃষিজ পণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বাজারজাতকরণে উদ্যোগী হয়ে বহুমুখী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রয়াস এগ্রো যাত্রা শুরু করেছে।বলা যায়, কৃষিভিত্তিক কার্যক্রম দিয়েই প্রয়াসের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ‘প্রয়াস এগ্রো’ সে কাজটিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রয়াস এগ্রোর উদ্যোগে নার্সারি, ভার্মি কম্পোস্ট, ট্রাইকো কম্পোস্ট, নিরাপদ ফল উৎপাদনে ইকোলিজিক্যাল গার্ডেন, মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে ‘বীজ ডিলারশিপ’, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের ব্রিডিং খামার, ভেড়া (গাড়ল) ব্রিডিং খামার, টার্কি প্যারেন্টস্টক ও

প্রয়াসেই চাকরিজীবন শেষ করতে চান অলোকা রানী

২০০২ সাল। সবে ডিগ্রি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। বসে না থেকে কাজ করার চিন্তা করছিলেন অলোকা রানী। তবে গতানুগতিক কোনো চাকরি নয়। সেই সময় মাঠকর্মীদের, বিশেষ করে নারীদের সাইকেল, মোটরসাইকেলে চড়ে চাকরি করতে দেখে এনজিওর প্রতি ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি হয় তার।অলোকা রানী চেয়ার- টেবিলে বসে চাকরি করতে চাননি, চেয়েছিলেন মানুষের সাথে মিশতে; তাদের সুখ-দুঃখের ভাগীদার হতে। সেই চিন্তা থেকে একজনের মাধ্যমে জানতে পারেন প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সংস্থায় (সোসাইটির) নিয়োগের কথা। ২০০২ সালের ১ জুন মাঠকর্মী হিসেবে প্রয়াসে যোগ দেন তিনি। প্রয়াসের প্রথম ইউনিট অফিস গোবরাতলায় শুরু হয় কর্মজীবন।চাকরিজীবনের প্রথম দিকে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন মনিরুজ্জামান, আমিরুল ইসলাম, হালিমা খাতুন, সিমন মারান্ডিকে। নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার হাজীনগর ইউনিয়নের হাসুড়া গ্রামের মেয়ে অলোকা রানী চাকরিজীবনের প্রথম মাসে বেতন পেয়েছিলেন ৪০০ টাকা। পরের ৬-৭ মাস পেয়েছিলেন ৫০০ টাকা করে। সেই সময় এই অল্প টাকায় জীবনযাপন অতিবাহিত করা কষ্টকর হলেও হাসিমুখেই সে কষ্ট মেনে নিয়েছিলেন প্রয়াসের প্রতি ভালো লাগা, আন্তরিকতা, টিমওয়ার্ক সর্বোপরি এর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক হাসিব হোসেনের কারণে।অলোকা রানীর মতে, প্রয়াসে যে যেই পদে থাকুক না কেন, প্রত্যেকেই প্রত্যেকের কাছে খুব সহজে পৌঁছাতে পারে, যোগাযোগ করতে পারে উপর থেকে নিচ- সর্বত্রই। এটাই প্রয়াসের প্রতি অলোকা রানীর বিমোহিত হওয়ার মূল উপজীব্য।ব্যবসায়ী বাবার সংসারে তিন বোন, দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনিই ছিলেন বড় সন্তান। প্রয়াসে চাকরিকালীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। কিন্তু প্রয়াসের কাজের প্রতি পুরো মাত্রায় আকৃষ্ট হওয়ায় মৌখিক পরীক্ষার জন্য কোনোরূপ চেষ্টা করেননি। পল্লী বিদ্যুতেও চাকরির সুযোগ হয়েছিল। বাড়ির সদস্যরাও চেয়েছিলেন, পল্লী বিদ্যুতে যোগ দিক অলোকা রানী। কিন্তু সেখানেও যোগ দেননি তিনি।কর্মজীবনের শুরুর দিকে অনেক বিড়ম্বনা সইতে হয়েছে তাকে, কটূ কথাও শুনতে হয়েছে নারী হয়ে সাইকেল চালানোর দরুন। সেসব মনে পড়লে এখন হেসেই উঠেন অলোকা রানী। হাসি আসে এই ভেবে যে, আজকে তারই সংস্থা অর্থাৎ প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাইকেল বিতরণ করছে। আর সেই সাইকেলে চড়ে নারী শিক্ষার্থীরা স্কুলেও যাচ্ছে।কর্মসূত্রে প্রয়াসের বিভিন্ন ইউনিট অফিসে তাকে কাজ করতে হয়েছে। তবে সব জায়গায় তিনি তার মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। তৃণমূল থেকে শুরু করে সবার সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে উঠেছে কাজ করার সুবাদে। মাঠকর্মী থেকে ইউনিট ব্যবস্থাপক হিসেবে পদোন্নতিও পেয়েছেন। আর বর্তমানে প্রয়াসের অডিট সেলে ডেপুটি ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বেতনও পান শুরুর বেতন থেকে ৯০ গুণ বেশি।২০১১ সালে ব্যবস্থাপক থাকাকালীন বিয়ে-থা করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুত্রবধূ হয়ে উঠেন অলোকা রানী। শ্বশুরবাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার বটতলায়। স্বামী চাকরি করেন ঢাকায়। তাদের ঘরে এক মেয়ে রয়েছেন, পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে।প্রয়াসের দক্ষ মেধাবী এই কর্মীর ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর এক দুর্ঘটনায় পা ভেঙে যায়। বাড়িতেই থাকতে হয় ৯ মাস। ওই ৯ মাসে প্রয়াসের আন্তরিকতায় কোনো ঘাটতি দেখেননি তিনি। নির্বাহী পরিচালক হাসিব হোসেনও তাকে সশরীরে দেখতে যান, যা তাকে আলোড়িত করে। সেই জায়গা থেকে আবারো ফিরে আসেন প্রয়াসে।কয়েকজন মাঠকর্মী নিয়ে পথচলা প্রয়াস বড় প্রতিষ্ঠান হবে, তা কখনো ভাবেননি অলোকা রানী। ভেবেছিলেন, নিজের কাজটাই শতভাগ করে যেতে হবে। আজ প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি অনেক বড় প্রতিষ্ঠান চাঁপাইনবাবগঞ্জে। জেলার গ-ি ছড়িয়ে দেশের অন্য জেলাতেও কাজ করছে প্রয়াস। জনবলও বেড়েছে। সাত শতাধিক কর্মীর মধ্যে পুরোনো কর্মী হিসেবে অলোকা রানী এখন স্বপ্ন দেখেনÑ প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটিতে থেকেই চাকরিজীবন শেষ করার।

নির্বাহী পরিচালকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল প্রয়াস

‘প্রয়াস’- এটি শুধু একটি নামই নয়, এটি একটি ভালোবাসার প্রতিষ্ঠান এবং এর সাথে মনের একটা সেতুবন্ধন তৈরি হয়ে গেছে। ১৯৯৫ সাল থেকেই প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির সাথে সামান্য হলেও জড়িত রয়েছি।হেড অফিসের নিচতলায় বারান্দা লাগোয়া সেই ছোট্ট ঘর দিয়ে কার্যক্রম বিস্তারে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। আমার মনে আছে, সেখানে একটা ছোট টেবিল আর চার/পাঁচটা চেয়ার- এই তো আসবাবপত্র। আর সেখানে বিভিন্ন কর্মসূচির রেজিস্ট্রার, বই-খাতাপত্র, সেগুলোতে কখনো নাম-ঠিকানা বা তথ্য-উপাত্ত লিখতাম। মাঝে মাঝে ফিল্ডে যেতাম, যেহেতু নির্বাহী পরিচালক মো. হাসিব হোসেন আমার স্বামী, তাই উনার সাথেই আমি যেতাম।সাইকেল চালিয়ে উনি ফিল্ডে যেতেন। তবে উনার বাবার অর্থাৎ আমার শ্বশুরের একটা ২০ বছরের পুরানো মোটরসাইকেল ছিল, সেই বাইকটা যেদিন পেতেন, কখনো কখনো সে বাইকে আমাকেও সাথে নিয়ে গেছেন। এরপর দেলবাড়ী ও গনসাপাড়া সাঁওতাল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এলাকাগুলোতে প্রশিকার আর্থিক সহায়তায় বয়স্ক এবং ছোট ছেলেমেয়েদের স্কুল পরিচালনার কাজ পেয়েছিল প্রয়াস, সেই স্কুল পরিদর্শনে আমিও যেতাম। বয়স্কদের স্কুল হতো রাতের বেলাতে। তাদের সাথে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, যা এখনো রয়ে গেছে আমাদের সাথে।দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আজকের এই অবস্থানে প্রয়াস। এখন যারা এখানে চাকরিতে যোগদান করছে, তারা ভাবতেই পারবে না প্রয়াস কি অবস্থার মধ্য দিয়ে আজকের এ অবস্থানে এসেছে। নির্বাহী পরিচালকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল প্রয়াস। সাথে সজল, হক ভাই এরকম অনেকের নাম আমার ঠিক এখন মনে নেই। তাদের অনেক ত্যাগ রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানের জন্য।আজকে যখন এর অনেকগুলো কর্মসূচি ও শাখা দেখি, তখন খুব ভালো লাগে। কোথাও প্রশিক্ষণে গেলে প্রশিক্ষকরা যখন প্রশিক্ষণ দিতেন, তখনই মনে মনে ভাবতাম যে আমাদের প্রয়াস কবে এমন হবে, এরকম প্রশিক্ষণ দেবে। এখন তো শুধু হেড অফিস নয়, প্রত্যেকটি ইউনিটে কমবেশি প্রশিক্ষণ হতেই থাকে।আজ আর নয়। প্রয়াসের জন্মদিনে সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। প্রয়াস এগিয়ে যাক তার আপন গতিতে, কাজের মধ্য দিয়ে সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাকÑ এই প্রত্যাশা। আলেয়া ফেরদৌস : সহকারী পরিচালক (যোগাযোগ), প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি

প্রয়াসের মাসিক সমন্বয় সভা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির মাসিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকালে জেলাশহরের বেলেপুকুরে অবস্থিত প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির প্রধান কার্যালয়ের নকীব হোসেন মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।সভায় সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক হাসিব হোসেন এবং সভা পরিচালনা করেন পরিচালক মুখলেছুর রহমান। দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় উপস্থিত ছিলেন- জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক নাসের উদ্দীন সজল, সহকারী পরিচালক তাজেমুল হক, সহকারী পরিচালক (নিরীক্ষণ) আবুল খায়ের খান, সহকারী পরিচালক জুলফিকার আলী ও মমিনুল ইসলাম, কনিষ্ঠ সহকারী পরিচালক মু. তাকিউর রহমান, কর্মসূচি ব্যবস্থাপক ফিরোজ আলম ও ফারুক আহমেদ এবং সকল আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক, কৃষি-মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যবস্থাপকগণ।সভায় প্রয়াসের চলমান কার্যক্রম ও সংস্থার কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি বিষয়ে আলোচনা হয়।

নাচোলে প্রয়াসের উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নে প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির উদ্যোগে টেকসই আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উদ্যোক্তা যুবদের কৃষিভিত্তিক দুই দিনের ভিডিওভিত্তিক এ প্রশিক্ষণে ২৫ জন যুবক অংশগ্রহণ করেন।পর্যায়ক্রমে আরো তিন ব্যাচে ৭৫ জন যুবকে এ ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তারা মাছ, গরু ছাগল, হাঁস-মুরগি পালনসহ কৃষিভিত্তিক কাজ করে নিজের পায়ে দাঁড়াবেন।পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফ’র সহযোগিতায় প্রয়াসের সমৃদ্ধি কর্মসূচির উন্নয়নে যুবসমাজ কার্যক্রমের আওতায় ‘স্বপ্ন আমার উদ্যোক্তা হব’ শীর্ষক এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়।বৃহস্পতিবার প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী যুবদের মাঝে সনদ বিতরণ করা হয়। পিকেএসএফের তৈরি প্রশিক্ষণের ভিডিও সঞ্চালনা করেন প্রয়াসের সমৃদ্ধি কর্মসূচির সমন্বয়কারী উজ্জল হোসেন।

রহনপুরে প্রয়াসের মাছের পোনা বিতরণ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির মৎস্যচাষি ৯ জন সদস্যদের মধ্যে ১৫ হাজার দেশী শিং ও দেশী মাগুর মাছের পোনা বিতরণ করা হয়েছে।রবিবার প্রয়াসের ইউনিট-৭ রহনপুর কার্যালয়ে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)’র সহায়তায় পোনাগুলো বিতরণ করা হয়। প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির সমন্বিত কৃষি ইউনিট (মৎস্যখাতে)’র আওতায় এসব পোনা বিতরণ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রহনপুর ইউনিট ব্যবস্থাপক মো. জামাল হোসেন, প্রয়াসের মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক, সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল ইমাম, সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এমদাদুল হক, রহনপুর শাখার হিসাবরক্ষক ও অফিসারগণ।প্রয়াসের মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক মৎস্য চাষিদের মাছের পোনা ছাড়ার নিয়ম, নিয়মিত সম্পূরক খাবার প্রয়োগ, মাঝেমধ্যে জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা, শীতকালে মাছের ক্ষত রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষার জন্য পুকুরে ১৫-২০ দিন পর পর চুন ও লবণ দেয়ার পরামর্শ প্রদান করেন। Post navigation ← Previou